সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার মেঘাই গ্রামে প্রতি বছর ঈদুল আজহায় একটি বিরল ও অনন্য ঐতিহ্য চোখে পড়ে। বাপ-দাদাদের প্রায় ২০০ বছর পুরনো ঐতিহ্য আজও ধরে রেখেছে এখানে চার হাজার পরিবার। তারা একসঙ্গে কোরবানিতে অংশ নিয়ে গ্রামের ভাতৃত্ববোধ ও ঐক্যের এক মধুর উদাহরণ স্থাপন করেছে।
এ বছরও একই উৎসাহ-উদ্দীপনায় কোরবানির মাঠ জমে উঠেছে আনন্দ ও উল্লাসে। মেঘাই গ্রামের ঐতিহ্যবাহী কোরবানির মাঠে গরু, ছাগল,ভেড়া ও মহিষ একযোগে কোরবানি করা হয়েছে। মাংস বন্টনের মাধ্যমে গ্রামের দুই হাজারেরও বেশি পরিবার খানার মানুষ উপকৃত হচ্ছে। স্থানীয়রা জানায়, মেঘাই গ্ৰামে কোরবানির মাঠ একটি। নয় গ্ৰাম নিয়ে গঠিত একটি বৃহৎ সমাজ (মুসলিম পাড়া ঈদগাহ ময়দান)। সকাল ১১টা থেকে শুরু হয় পশু জবাই ও মাংস তৈরির কাজ, যা বিকাল পর্যন্ত চলে। মাঠজুড়ে বিরাজ করে উৎসবমুখর পরিবেশ।
প্রতিটি কোরবানির পশু থেকে তিন ভাগ মাংস হয়। তার একভাগ জমা রাখা হয় 'সমাজের জন্য'-এ, যেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেচ্ছাসেবীরা সমানভাবে মাংস বন্টন করেন। গ্রামে প্রতিটি পরিবার ঘরে ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
কোরবানী সময় দ্বায়িত্ব প্রাপ্তি মুরুব্বি সোলায়মান হোসেন মেম্বার বলেন, 'এ কোরবানির ঐতিহ্য আমাদের ভাতৃত্বের বন্ধনকে আরও মজবুত করেছে। এটা মেঘাই গ্রামের পরিচয়। আমরা সবাই মিলেমিশে আনন্দ করি। আশা করি এই ঐতিহ্য আমাদের পরবর্তী প্রজন্মও ধরে রাখবে।'
প্রকৌশলী আরিফ তালুকদার বলেন, 'আমাদের পিতা, দাদা ও পূর্বপুরুষের থেকেই এই ঐতিহ্য আমাদের কাছে এসেছে। আনুমানিক ২০০ বছর ধরে এই মাঠে (মেঘাই গ্ৰামে) কোরবানি হয়ে আসছে। আমার দাদা, বাবা ও আমরাও এই ঐতিহ্য পালন করছি।' ঈদের আনন্দে মেতে থাকা এই গ্রামের মানুষদের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের চমৎকার এই চিত্র সামাজিক বন্ধন ও ঐতিহ্যের প্রতীক হয়ে রয়েছে।