যশোর প্রতিনিধিঃ যশোর সদর উপজেলায় ২ হাজার ৪০ বিঘা জমিতে করলা চাষে ব্যস্ত সময় পার করছে কৃষকরা। সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নেই ৮শ’ ৯০ বিঘা জমিতে করলার চাষ হচ্ছে এ বছর। এ ইউনিয়নের বীর নারায়ণপুর গ্রামে ২শ’ বিঘারও বেশি জমিতে করলা চাষ হয়েছে।
এছাড়াও ইছালী, কাশিমপুর ও হৈবতপুর ইউনিয়নেও পটল, বেগুন, লাউ, ঢেড়স, ঝিঙ্গা, পুইশাক ও শসার পাশাপাশি চাষ হয়েছে করলারও। বর্তমানে এলাকার কৃষকরা করলা চাষের জন্য জমি নিড়ানো, আগাছা মুক্ত করা, মাঁচা দেয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমিতে কাজ করতে দেখা যাচ্ছে কৃষকদের। তবে গত বছরের তুলনায় এ বছর করলার চাষ কম হয়েছে বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।
যশোর কৃষি বিভাগ তথ্য মতে, যশোর জেলায় গ্রীষ্মকালীন মোট সবজির লক্ষ্যমাত্রা ১৪ হাজার ৫ হেক্টর। সেখানে চাষ হয়েছে ৮ হাজার ৫’শ হেক্টর। তবে করলার চাষের আলাদা ভাবে এ বছর এখন সঠিক হিসাব নেই। গত বছর যশোর জেলায় করলা চাষ হয়েছিল ৫’শ ৬৬ হেক্টর জমিতে। তবে এ বছর সদর উপজেলায় করলার চাষ হয়েছে ২’শ ৭৫ হেক্টর।
কৃষক আব্দুল মান্নান জানান, গত বছরের থেকে এ বছর করলার চাষ কম করছি। নাবিতে চারা লাগানো হয়েছে। গাছের অবস্থা ভালো। এবছর আড়ায় বিঘা জমিতে করলার চাষ করেছি। আমরা সবসময় কৃষি অফিসারদের পাশে চাই। যাতে আমরা চাষে বিভিন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না হয়। পোকা-মাকড় দমনের জন্য যেন তারা ভাল পরামর্শ দেয়। যাতে আমাদের বিভিন্ন কোম্পানির ওষুধ ব্যবহারে না ঠকায়।
কৃষক আরিফুজ্জামান ছনি জানান, তিন বিঘা মত করলার চাষ করছি। প্রথম দিকে যে করলা লাগানো হয়েছে। সেই গাছগুলো একটু খারাপ। কারণ প্রথম দিকে গরমের ভাবটা একটু বেশি ছিল। তাই গাছ একটু খারাপ। তবে বর্তমানে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গাছ ভালো হয়ে আসছে। এদিকে কয়েক দিন আগে যে করলার চারা লাগানো হয়েছে। যে গাছ খুব ভালো।
কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, এবছর প্রথম দিকে কয়েকদিন ভালো তাপমাত্রা ছিল। এ তাপে মাঠের অনেক করলার গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় ৪ বিঘা করলার চাষ করছি। তবে দঃখের বিষয় অতিরিক্ত তাপে ২ বিঘা মত গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। নাবিতে যে গাছ লাগানো হয়েছে সে গাছ ভালো হয়েছে। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মাসুদুজ্জামান বলেন, এ বছর করলা গাছের অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। এ বৃষ্টিতে সবজির তেমন বেশি ক্ষতি হবে না। কয়েকদিন আগে শিলা বৃষ্টিতে একটু ক্ষতি হয়েছিল। তবে সবজিতে মাঝে মধ্যে ছত্রাকনাশক স্প্র করলে ঠিক হয়ে যাবে। এ বছর লেবুতলা ইউনিয়নে করলার চাষ হয়েছে ১’শ ২০ হেক্টর। গত বছর তুলনায় এ বছর করলার চাষ একটু কম। আমরা সব সময় কৃষকদের সবজি চাষসহ যে কোন বিষয়ে বিভিন্ন পরার্মশ দিয়ে থাকি। যে কোন বিষয়ে কৃষকরা আমাদের নিকট পরামর্শ নিতে পারেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী বলেন, যশোর সদর উপজেলায় ২ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি চাষ হয়েছে। এর মধ্যে করলার চাষ হয়েছে ২’শ ৭৫ হেক্টর। গত বছর তুলনায় এ বছর করলার চাষ একটু কম হতে পারে। এ বৃষ্টিতে সবজির তেমন কোন ক্ষতি হওয়ার আশংকা নেই। তবে শিলা বৃষ্টিতে ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। আমরা কৃষকদের পাশে থাকি। কোন ফসল কেমন অবস্থায় আছে আমি সময় পেলেই মাঠে যেয়ে পরিদর্শন করি এবং সেই অনুযায়ী কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তারের অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) সমরেন বিশ্বাস বলেন, এ বৃষ্টিতে সবজির তেমন কোন ক্ষতির আশংকা নেই। তবে শিলা বৃষ্টিতে ক্ষতি হয়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে আসায় বর্তমানে করলার গাছ অবস্থা ভালো। বেশি বৃষ্টি হলে পরিমাণ মত ছত্রাকনাশক দেওয়ার পরার্মশ দেওয়া হয়।
এদিকে বিষ মুক্ত করলা চাষে কৃষকদের জৈব বালায় নাশক ব্যবহার করার পরার্মশ দিয়ে থাকি।