আকিকুর রহমান রুমনঃ হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শিবপাশা ইউনিয়ন এর পশ্চিম-ভাগ গ্রামে মাটি বোঝাই গাড়ি যাতায়াতে নিষেধ দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু'পক্ষের সংঘর্ষে মদরিছ তালুকদার নামে একজন নিহত ও ১০জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
জানা যায়, ৬ মার্চ (বৃহঃস্পতিবার) ইফতার এর পূর্ব মুহূর্তে বিকাল ৫টার দিকে কাথব তালুকদার এলাকার ভিতর দিয়ে মাটি বোঝাই গাড়ি দিয়ে মাটির ব্যবসা করে আসছিলেন। যার জন্য প্রায়ই এলাকার বিভিন্ন স্থানে মাটি দিতে গিয়ে তিনি মাটি বোঝাই গাড়ি গুলো এলাকার ভিতর দিয়ে যাতায়াত করে চলতেন। এরই ধারাবাহিকতায় মদরিছ তালুকদার এর পারিবারিক পুকুর পাড় দিয়ে মাটি বোঝাই গাড়ি আনাগোনা করায় তাদের পাড় ভেঙে যাচ্ছে বলে নিষেধ করা হয়। এরই সূত্র ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে বাক-বিতন্ডার এক পর্যায়ে উভয়পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন। এতে উভয়পক্ষের ১০জনের মতো আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
আহতদেরকে স্থানীয়রা উদ্ধার করে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এর মধ্যে গুরুতর আহত মদরিছ তালুকদারকে(৫০) হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মদরিছ তালুকদারকে মৃত ঘোষণা করেন।
সংঘর্ষ চলাকালে আশপাশের লোকজন সূত্রে আরও জানা যায়, কাথব তালুকদারের লোকজন লোহা জাতীয় দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করা হয়।
এদিকে মদরিছ এর মৃত্যুর সংবাদটি গ্রামের লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে উভয়পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করাসহ গরু,ছাগল লুটপাট করার খবর পাওয়া যায়। মৃত্যুর খবর পেয়ে কাথব তালুকদার এর লোকজন মধ্যে কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান বলেও খবর পাওয়া যায়।
এদিকে নিহত হওয়া লোকজন প্রতিপক্ষের গরু,ছাগল লুটপাট ও বাড়িঘর ভাংচুর করার অভিযোগ তুলেন কাথব তালুকদার এর লোকজন। এদিকে দীর্ঘদিন ধরে গ্রামটিতে আধিপত্য নিয়ে দু'টি পক্ষ সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আলী আমজাদ তালুকদার ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নলিউর রহমান তালুকদার গ্রামটিতে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।
এই দু'টি পক্ষের লোকজনের মধ্যে প্রায় সময়ই টুকিটাকি বিষয় নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে এসেছে। এতে উভয় পক্ষের লোকজনের প্রানহানীসহ পঙ্গুত্ব বরণ করেও জীবন যাপন করে যাচ্ছেন। আর এসব সংঘর্ষের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের মধ্যে নিরীহ অসহায় গরীব লোকজনের বাড়িঘর ভাংচুর,লুটপাট এর মতো ঘটনা ঘটে আসছিলো। যদিও আলী আমজাদ তালুকদার ও নলিউর রহমান তালুকদার সম্পর্কে চাচা ভাতিজা হন।
এই অবস্থার মধ্যে নিহত মদরিছ তালুকদার এর বিষয়টিকেও দু'টি পক্ষের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে তৃতীয় একটি পক্ষ প্রচার করে আসার অভিযোগ পাওয়া যায়।
গ্রামবাসীর কাছ থেকে জানাযায়,নিহত মদরিছ তালুকদার ও আজ সংঘর্ষের প্রতিপক্ষের লোকজন হচ্ছেন সাবেক শিবপাশা ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও আ'লীগ নেতা,যিনি বর্তমানে মিথ্যা মামলার আসামী হয়ে দেশ ছাড়তে গিয়ে ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে রয়েছেন সেই আলী আমজাদ চেয়ারম্যান লোক। মাটি বোঝাই গাড়ি দিয়ে পুকুরের পাড় ভেঙে যাওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র সংঘর্ষ হয়েছে বলেও জানান তারা। কিন্তু তৃতীয় একটি পক্ষ গ্রামের শান্তি বিনষ্ট করতে এবং বড় ধরনের দাঙ্গা হাঙ্গামার ঘটনা ঘটিয়ে তাদের ফায়দা হাসিলের লক্ষ্যে এখানে দু'টি পক্ষের লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে এমন অপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন।
সংঘর্ষের খবর পেয়ে আজমিরীগঞ্জ থানা পুলিশ ও শিবপাশা ফাঁড়ি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার কথাটি জানিয়েছেন আজমিরীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি)এবিএম মাঈনুল হাসান।
এব্যাপারে সর্বশেষ জানতে রাত ৯ টা ৫ মিনিটে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে,তিনি মদরিছ নিহত হওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন,কাথব তালুকদার মাটি বোঝাই করে গাড়ি দিয়ে নিহত মদরিছ তালুকদার এর বাড়ির সামনের পুকুর পাড়ের রাস্তা ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে নিষেধ করার বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কাথব তালুকদার লোকজন ফিকলের মতো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে মাথায় আঘাত করার বিষয়টি জানান।
তবে তেমন কোন সংঘর্ষের ঘটনা কিংবা আহতের ঘটনা ঘটেনি। বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। এছাড়াও নিহতের পক্ষ হতে এখনো কোন অভিযোগ দেওয়া হয় নাই,অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেও জানিয়েছেন।