শাজাহানপুর (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ কলেজে বিভিন্ন পদের চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা কলেজ সভাপতি ও তার দোষর কলেজের অধ্যক্ষ নিজেও। পরবর্তী কয়েক দফায় কলেজে প্রবেশের চেস্টা করেও বারবার ব্যার্থ অধ্যক্ষ মোতাহার হোসেন মুকুল। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার শাহজাহানপুর উপজেলার গোহাইল ইসলামীয়া স্কুল এন্ড কলেজে।
জানা যায়, জুলাই বিপ্লবের পরে অনিয়ম ও দুর্নীতির করনে কলেজ ছেড়তে বাধ্য হন অধ্যক্ষ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান আলী আতোয়ার তালুকদার ফজু এবং তার বড় ভাই আলী সানোয়ার তালুকদার সাজুর পুত্র আলী ইমাম ইনোকি মিলে প্রতিষ্ঠানটির বারবার সভাপতির দায়িত্বে থাকতেন। মূল ঘটনা শুরু হয় উপজেলা যুবলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আলী ইমাম ইনোকির সময়কালে।
তিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছয়টি পদে কর্মচারী নিয়োগের জন্য কয়েকজন চাকুরী প্রার্থীর নিকট থেকে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এবং নিয়োগ পরীক্ষাও শুরু হয়। কিন্তু বিপত্তি ঘটে অর্থ লেন্দেনের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া কয়েকটি কল রেকর্ড। যেগুলোতে কথা বলতে শোনা যায় বিভিন্ন চাকুরী প্রার্থীদের সাথে ওই প্রতিষ্ঠানের সভাপতি আলী ইমাম ইনোকি ও অধ্যক্ষ মতাহার হোসেন মুকুলের।
স্থানীয় অভিভাবক মিজানুর রহমান মতিন জানান, "তাদের কথোপকথনের কল রেকর্ড গুলোই প্রমানিত হয় তাদের বিশাল অংকের অর্থ লেনদেন ঘটনা। যা মুহূর্তের মধ্যে মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিষয়টি আমলে নিয়ে শিক্ষা বোর্ড নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিতের আদেশ দেন। "
এর অল্প কিছুদিন পরেই ছাত্রদের জুলাই বিপ্লবে আওয়ামীলীগের পতন হয় এবং পালিয়ে যায় আলী ইমাম ইনোকি। ছাত্রছাত্রীদের চাপের মুখে পালিয়ে যান অধ্যক্ষ মুকুল।
দীর্ঘদিন পর গত ২৭মে মঙ্গলবার ১০-১৫টি মোটর সাইকেল নিয়ে ফিল্মি স্টাইলে কলেজে ঢোকেন তিনি। এ সময় শিক্ষার্থীরা বাধা দিলে বহিরাগতদের দ্বারা মারধরের শীকার হয় ৪/৫জন শিক্ষার্থী। আহত শিক্ষার্থী হলেন রিয়াদ, খুশি, রাশিদুন্নবী সাইন, ও আরমান হোসেন এবং নিজ সন্তান্দের রক্ষা করতে এসে আহত হন স্থানীয় অভিভাবক মিজানুর রহমান মতিন। এর একপর্যায়ে ছাত্রছাত্রীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে অধ্যক্ষ মুকুলের মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ এসে উভয়পক্ষকে শান্ত করার চেস্টা করে।
শিক্ষার্থীরা জানান, বহিরাগতদের নিয়ে এসে তাদের গায়ে হাত দেওয়া এই শিক্ষককে তারা আর কোন ভাবেই বিদ্যালয়ে ঢুকতে দেবে না।
অভিভাবকগণ জানান, এই প্রিন্সিপালের কাছে আমাদের সন্তানরা নিরাপত্তাহীন এখান থেকে অব্যাহতি দেওয়া হোক।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ শহিদুল ইসলাম জানান, ১৪ আগস্ট ২০২৪ এর পর থেকে অধ্যক্ষ মুকুল স্যার অনুপস্থিত। তিনি বারবার কঅলেজে আসার চেষ্টা করেন কিন্তু শিক্ষার্থীদের বাঁধার মুখে ঢুকতে পারেন না। সবশেষ গত মঙ্গলবার তিনি ১০-১২টি মোটরসাইকেলের সহকারে কলেজে ঢোকেন। তখন সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিক্ষুব্ধ হলে একটা বিশৃংখল পরিবেশের সৃষ্টি হয়। এতে ৪জন শিক্ষার্থী আহত হয়।
বিষয়টি নিয়ে আমরা বর্তমান সভাপতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মহোদয়ের সাথে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
প্রিন্সিপাল মোতাহার হোসেন মুকুল জানান, তিনি গত মংগলবার কলেজে প্রবেশ করতে গেলে কিছু দুষ্কৃতিকারী তাকে বাধা দেয়। এছাড়া দুর্নীতির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি উত্তর না দিয়ে মোবাইল ফোন কেটে দেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান, কলেজের বিশৃঙ্খলার ঘটনাটি জেনেছি। এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে এছাড়াও শিক্ষার্থীদের অভিযোগের ভিত্তিতে আগের বিষয়গুলো নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হওয়ায় তদন্ত কাজ কিছুটা থেমে রয়েছে। তবে খুব শীঘ্রই তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু সমাধান করা হবে।