লালমনিরহাট প্রতিনিধি, আরমান হোসেন রাজু: গত বছরের ৫ আগস্ট, লালমনিরহাট শহরে আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা ও কথিত হুন্ডি ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন সুমন খানের বাসায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও লুটপাটের ঘটনায় ছয়জন নিহত হন। শহরের জনবহুল এলাকায় অবস্থিত ওই বাড়ি থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে লালমনিরহাট সদর থানা থাকলেও দীর্ঘ নয় মাসে কোনো তদন্ত হয়নি। অথচ ২০২৫ সালের ২৭ মে হঠাৎ করে আরমান আরিফ নামে একজন ব্যক্তি ৩৮ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০-৩৫ জনকে অজ্ঞাতনামা করে সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
এই এজাহারে ৩৩ নম্বরে নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয় সাংবাদিক বাঁধন ঢালী’র, যিনি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন। বর্তমানে তিনি বিবিসি নিউজ ২৪ রংপুর বিভাগীয় চীফ, দৈনিক আজকের গোয়েন্দা সংবাদ পত্রিকার লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি, ঢাকা বুলেটিন নিউজের স্টাফ রিপোর্টার এবং উত্তরবঙ্গ ক্রাইম নিউজ-এর সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও তিনি জাতীয় সাংবাদিক ঐক্য ফোরামের লালমনিরহাট জেলা শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক এবং বাংলাদেশ জার্নালিজ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক।
বাঁধন ঢালী এ ঘটনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক দাবি করে বলেন, "ঘটনার দিন আমি ঘটনাস্থলের এক কিলোমিটার দূরত্বেও ছিলাম না। এই মামলায় নিহতদের পরিবারের কেউ বাদী কিংবা সাক্ষী নন। এটি একটি পরিকল্পিত হয়রানি।"
তিনি আরও বলেন, "আমি রাজনীতি শুরু করি শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শে গড়া সংগঠন বিএনপির ছাত্রদলের পৌর সদস্য হিসেবে। পরে স্বেচ্ছাসেবক দলের লালমনিরহাট পৌর ৩নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। ২০১৩ সালের পর থেকে একের পর এক মিথ্যা মামলায় আওয়ামী লীগ আমাকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করার চেষ্টা করে। এখনও জি.আর. ৫৫৭ লাল মামলাটি চলমান।"
সাংবাদিকতা ও ব্যবসার মাধ্যমে জীবন নির্বাহ করা বাঁধন ঢালী ২০১৮ সাল থেকে পেশাগতভাবে সংবাদপত্রে যুক্ত হন। পাশাপাশি তিনি ‘ঢালী ফ্যাশন হাউস’ নামের একটি পোশাকের দোকানও পরিচালনা করে আসছেন। দীর্ঘ নয় বছর ধরে ব্যবসা করে পরিবার নিয়ে জীবনযাপন করছেন তিনি।
প্রতিবাদী কণ্ঠে বাঁধন ঢালী বলেন, "সাখাওয়াত হোসেন সুমন খান একাধিক সাংবাদিক ও প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তাকে মাসোহারা দিয়ে পরিচালনা করতেন। আমি তার বিরুদ্ধে একাধিক অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করি, যা গুগলে এখনো রয়েছে। ফলে তিনি ও তার মদদপুষ্ট মহল আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত।"
তিনি দাবি করেন, "আমাকে দমন করার জন্যই মিথ্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে। এটি আইনের শাসনের পরিপন্থী। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, সিআইডি, ডিজিএফআইসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ মামলার সুষ্ঠু তদন্ত হোক এবং দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হোক।"
বাঁধন ঢালী আরও জানান, তিনি সাংবাদিকতা করেন আপোষহীন নীতিতে, কোনো মহলের প্রভাব বা চাপের কাছে নতি স্বীকার করেন না। তার ভাষায়, "সাংবাদিকতা আমার পেশা নয়, প্রতিবাদই আমার নেশা।"
এদিকে, সুমন খানের বিরুদ্ধে আগেও থানায় অভিযোগ রয়েছে যে তার গুণ্ডাবাহিনী সাংবাদিক বাঁধন ঢালীকে বিডিআর গেট এলাকায় হেনস্তা করেছিল এবং তাকে কিনে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল।
সাংবাদিক সমাজ ও সাধারণ জনগণের পক্ষ থেকে এই মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা দ্রুত প্রত্যাহার এবং ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী ডা. মো. ইউনুসের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলা হয়েছে— “বাংলাদেশে কলমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করুন, শাসনের নামে শোষণ বন্ধ করুন।”