একাত্তর সংবাদ ডেস্কঃ রাজধানীর উত্তরায় প্রতিবন্ধী যুবকের ব্যবসা দখল সংক্রান্ত মানববন্ধনের সংবাদ প্রকাশ করায় মব সৃষ্টি করে সাংবাদিককে হত্যার হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত ওই নেতার নাম আল আমিন সরকার ওরফে শামীম আল মামুন ও তার ভাই মইম সরকার। এরই প্রতিবাদে মানববন্ধন করেছে উত্তরায় বসবাসরত গণমাধ্যমকর্মীরা।
মঙ্গলবার (১৩ মে) বিকেল ৫টায় উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের খালপাড়ে অবস্থিত উত্তরা প্রেসক্লাবের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তারা অভিযুক্ত বিএনপি নেতা আল আমিন সরকার ও তার ভাই মইম সরকারকে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
জানা যায়, সম্প্রতি দক্ষিণখানের ফায়দাবাদ এলাকায় বিএনপি নেতা আল আমিন সরকারের বিরুদ্ধে নাহিদ নামের এক প্রতিবন্ধী যুবক তার পরিচালিত ইট-পাথরের ব্যবসা দখলের অভিযোগ এনে মানববন্ধন করেন। বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা ও অনলাইন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। সেই সংবাদটি ফেসবুক একাউন্টে শেয়ার দেন উত্তরা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি বদরুল আলম মজুমদার। আর এতেই মব সৃষ্টি করে ওই সাংবাদিককে মেরে ফেলার অডিও পাঠায় অভিযুক্ত বিএনপি আল আমিন সরকার ও তার অনুসারীরা। সেই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া একাউন্ট থেকেও সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে নানা অপতথ্য ছড়ায় চক্রের সদস্যরা।
এদিকে আয়োজিত মানববন্ধনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ৪৭ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আল আমিন ২০১৬ সালে তার নিজ দোকান থেকে ইয়াবাসহ আটক হয়ে প্রায় ৫ মাস জেল খাটে। ৫ আগস্টের পর সে বিএনপির পদ ব্যবহার করে এলাকার নতুন বিল্ডিংয়ের মালামাল সাপ্লাইসহ ময়লা ও ডিস-ইন্টারনেটের দখল নেয়। সিনিয়র নেতাদের আশীর্বাদ নিয়েই আল আমিন সরকার এসব অপকর্ম করে বেড়াচ্ছে বলেও মানববন্ধনে অভিযোগ করা হয়।
অভিযুক্ত আল আমিনের বিষয়ে সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদার বলেন, সে খুব উগ্রপ্রকৃতির লোক। তার ভাই মইম কিশোর গ্যাংয়ের সক্রিয় লিডার। এর আগে মিরপুরে এক প্রোগ্রামে গিয়ে মারামারি করার কারণে দল থেকে বহিষ্কার হয় আল আমিন। পরে থানার এক শীর্ষ নেতার বিশেষ অনুগ্রহে পদ ফিরিয়ে দেন নগর নেতারা।
তিনি আরও বলেন, যেহেতু দীর্ঘদিন এ এলাকায় বসবাস করি, তাই বিভিন্নভাবে খবর আসে থানার সেই শীর্ষ নেতা বিএনপির নামে দক্ষিণখানে একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গড়ে তুলেছে। এসব বাহিনীর দ্বারা কোটি টাকার চাঁদার নিয়ন্ত্রণসহ সবকিছু তার ইশারায় চালানোর জন্যই মাদক মামলার আসামিকে বিএনপির পদ পাইয়ে দেয়া হয়েছে।
হুমকির বিষয়ে সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদার বলেন, নিউজ প্রকাশ এবং সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার দেয়ার কারণেই তারা আমাকে মবের মাধ্যমে মারার হুমকি দিচ্ছে। আমি ফ্যাসিস্ট আমলে দুইবার উত্তরা প্রেসক্লাবের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছি। ক্লাবের নেতৃত্বে থাকায় বিএনপি-আ.লীগ ও জামায়াতসহ সবধরনের লোকের সাথে উঠাবসা করতে হয়েছে। এটা নতুন কিছু না। জুলাই আন্দোলনে পুলিশ আমাকে উত্তরা থেকে ধরেও নিয়ে গেছে। অথচ, মাদক ব্যবসায়ীরা আমাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়াচ্ছে।
মানববন্ধনে উপস্থিত জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতা ও বাসস সাংবাদিক ইসমাইল আহসান বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে মেরে ফেলার যে হুমকি দেয়া হয়েছে তা ফ্যাসিবাদের পুনরাবৃত্তি। এটা খুবই দুঃখজনক ও নিন্দনীয়।
তিনি বলেন, যেকোন সংবাদের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করে প্রতিবাদ জানানো যেতে পারে। কিন্তু হুমকি-ধামকি দিয়ে সাংবাদিকদের কন্ঠরোধ কোনো ভাল সংস্কৃতি হতে পারে না। আমরা এ ধরণের ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দল থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
বক্তব্যে উত্তরা প্রেসক্লাবের সদস্য ফরিদ আহমেদ নয়ন বলেন, আমরা সাংবাদিক আমাদের কলম চলবে। যারা আমাদেরকে হুমকি দিয়ে দমিয়ে রাখতে চায় তাদেরকে অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে হুমকি দেয়ার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
খোলা কাগজ সহ-সম্পাদক শিপার মাহমুদ বলেন, ‘শুধুমাত্র সত্য তুলে ধরার কারণে যখন একজন সাংবাদিককে হুমকির মুখে পড়তে হবে, এটা কখনোই মেনে নেয়া যায় না। বদরুল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে যে হুমকি এসেছে- তা শুধু তার ব্যক্তি নিরাপত্তা নয়, দেশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতাকেই হুমকির মুখে ফেলেছে।’
উত্তরা প্রেসক্লাবের সভাপতি এ কে আজাদ বলেন, সংবাদ প্রকাশের জেরে একজন সাংবাদিককে মেরে ফেলার হুমকি নতুন বাংলাদেশের জন্য লজ্জাকর। আমরা বলতে চাই যারা অন্যায়ভাবে উত্তরার সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে মারার হুমকি ও তার নামে অপতথ্য ছড়াচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে দল থেকে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্যথায় জাতীয় সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচির ডাক আসবে।
বক্তব্যে কালের কন্ঠ পত্রিকার রিপোর্টার আল আমিন হোসাইন বলেন, সমাজের চিত্র তুলে ধরাই আমাদের গণমাধ্যমকর্মীদের দায়িত্ব। আর এ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যদি জীবনের ওপর হুমকি আসে তাহলে এর দায়-ভার রাষ্ট্রকেই বহন করতে হবে।
এ সময় তিনি সিনিয়র সাংবাদিক বদরুল আলম মজুমদারকে হুমকি দেয়া ওই বিএনপি নেতাসহ তার সহযোগীদের শাস্তির দাবি জানান।
উত্তরা প্রেসক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদক যোবায়ের আহমেদের সঞ্চালনায় এতে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র সাংবাদিক মমতাজ উদ্দিন, খোকন, ইত্তেফাকের প্রতিনিধি মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, চ্যানেল এস রিপোর্টার তরিক শিবলী, খোলা কাগজের উত্তরা প্রতিনিধি মাহফুজ আলম খোকন, একুশে টেলিভিশনের রিপোর্টার ইমন, মাইটিভি রিপোর্টার শাহজালাল জুয়েল, একুশে টিভি রিপোর্টার ইমন চৌধুরী প্রমুখ।