
মনিরুজ্জামান মনিরঃ পবিত্র ঈদুল ফিতরের আর মাত্র কয়েকদিন । আর এ ঈদকে সামনে রেখে জমে উঠেছে যশোরের শপিংমলগুলোতে। শপিংমল থেকে শুরু করে ফুটপাতের দোকানে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়ে জমে উঠেছে শহরের মার্কেট গুলো ।
সরেজমিনে দেখা যায়, যশোর এইচ এম এম রোডে বাটার মার্কেট, লিবাটি মার্কেট, জনতা সুপার মার্কেট, চন্দনা সুসহ আশেপাশের অধিক মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভিড়ে যেন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। এমনকি জুতার মার্কেটের কর্মচারিও কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে না। লিবাটিসহ সব মার্কেটে নারী এবং শিশুদের ভিড় বেশি। জুতার দোকান চামড়া, রেক্সিন, পলিফাইবারসহ বিভিন্ন জুতা রয়েছে। তুলনামূলক ছোটদের জুতার দাম কিছুটা বেশি। ৩’শ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকার মধ্যে জুতা রয়েছে এসব দোকানে। লিবার্টি সুজ মার্কেটে সেন্ডেল ৫২০ হতে ৩ হাজার টাকা, সু- ১৩’শ২০ হতে ৪৫’শ টাকা এবং নারী-শিশুদের ৩৭০ হতে শুরু করে ১২’শ৫০ টাকা পর্যন্ত জুতা রয়েছে। বাটা মার্কেটে সেন্ডেল জাতিয় চামড়ার ৬৯৯ হতে ৫ হাজার এবং সু- ২ হাজার হতে ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত এক রেটে বিক্রি হচ্ছে। চন্দনা সু মার্কেটে নারী-শিশুদের জুতা ১৫০ টাকা হতে ৫’শ এবং পুরুষ ৩’শ হতে ৭’শ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
জুতা ব্যবসায়ীরা জানান, ঈদের ১০ দিন আগে থেকে বেচাকিনা শুরু হয়। আর এ বেচাকেনা চলবে চাঁনরাত পর্যন্ত। তবে বেসরকারি চাকরিজীবিদের বোনাস দিলে আরো কেনাকাটা বাড়বে। এদিকে জুতা ব্যবসায়ীরা বলছেন এ বছর নারী এবং শিশুদের জুতার চাহিদা বেশি।
ঝিকরগাছা ছুটিপুরের রায়হান জানান, আমরা দু’বন্ধু ঈদের কেনা কাটা করতে আসছি। বাকি ছিল জুতা কেনা সেটাও হয়েছে। চাহিদা মত জুতা কিনতে পারছি। টাকার বাজেট যা ছিল তার মধ্যে হয়েছে। পরিবারের সবারই কেনাকাটা প্রায় শেষ।
ক্রেতা মরিয়ম বেগম জানান, মেয়ের জন্য একজোড়া জুতা কিনতে আসছি। এখনও কিনতে পারিনি। তবে পছন্দ হলে দামাদামি কেনার ইচ্ছা আছে। আজকে টাকা থাকলে নিজের জন্য কিনবো। পরে পরিবারের সবার জন্য কিনবো।
বেনাপোলের জুলফিক্কর আলী জানান, আমরা পরিবার সহ আজ যশোরের মার্কেটে আসছি। অনেক কিছু কেনাকাটা করছি। এখন বড় ভায়ের জন্য জুতা কিনবো। কয়েকটি জুতার শোরুমে ঘুরে দেখছি। এখন বাটা শোরুমে আসছি যদি পছন্দ হয় তাহলে কেনা হবে। এখানে তো আর দামাদামির কোন বিষয় নেই।
ইয়ান আলী জানান, স্ত্রীও ছেলে ভাই নিয়ে আজ মার্কেট করতে আসছি। কারণ ঈদের তো আর বেশি দিন সময় নেই। আমরা সবাই রোজার ঈদে কেনাকাটা করি। কোরবানির ঈদে কোন কেনাকাটা করি না। কারণ ঐ ঈদে কোরবারি নিয়ে সবাই ব্যাস্ত থাকি।
হাশিমপুর গ্রামের সাকিব হাসান জানান, আমরা সব কিছু শহর থেকে কিনাকাটা করি। প্রতি বছর রোজার ঈদে কেনাটাকা করা হয়। দাম বেশি কম বিষয় না, কারণ আমরা মুসলিম তাই বছরে আমাদের রোজার ও কোরবানির উৎসবই সব থেকে বড় উৎসব। তবে রোজার ঈদে মার্কেট করা হয় আর কোরবানির ঈদে পশু কোরবারি নিয়ে ব্যাস্ত থাকা পড়ে। তাই এ ঈদে পরিবারের সবারই মার্কেট করা হয়।
কর্মচারি রবি ইসলাম জানান, চাঁনরাত পর্যন্ত ক্রেতাদের চাপে আমাদের বসার সুযোগ নেই। জুতা বিক্রি শুরু হয় মুলত ২০ রমজান হতে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত।
বাটা মার্কেটের ম্যানেজার ফরিদ হোসেন জানান, ঈদের ১০ দিন আগে হতে আমাদের বেচাকেনা বাড়া শুরু করে। আর চাঁনরাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলবে। আমাদের ব্যবসা মূলত সিজনাল। বছরের দুইটা ঈদে যা সেল হয়।
জনতা সুপার মার্কেটের চায়না ফ্যাশানের ম্যানেজার সৈয়দ আল মামুন জানান, রমজানের শুরুতে বেচাকেনা বাড়লেও ১৮ হতে ২০ রমজানের পর ঈদের আমেজ শুরু হয়। আর তা চলতে থাকে চাঁনরাত পর্যন্ত। আসা করি এ বছরও তার্গেট অনুযায়ী বেচাকেনা হবে। তবে এ বছর পুরুষের তুলনায় নারী ও শিশুদের জুতার উপর চাহিদা অনেক বেশি। পুরুষের চাহিদা বাড়লেও ২৫ রমজানের পরে বাড়তে পারে।
চন্দনা-সুর রাকিব হাসান জানান,ঈদে বেচাকেনার চাপ বাড়ছে। আমাদের দোকানের কোন কর্মচারির একটু সময় বসার সময় নেই। তবে বিকাল হলেই ক্রেতাদের ভিড়ে মার্কেট জমে উঠছে। তবে এ বার লেডিস জুতার চাহিদা বেশি। আমরা পাইকারি ও খুচরা মূল্যে জুতা বিক্রি করি। এখানে কম টাকার জুতা বিক্রি হয়। ১৫০ টাকা হতে শুরু করে ৭’শ টাকার জুতা পাওয়া যায়।
যশোর এইচ এম এম রোডে লিবার্টি মার্কেটের ম্যানেজার রেজাউল করিম জানান, ঈদে নতুন জুতা কেনার চাহিদা সবসময়ই বেশি থাকে। মোটামুটি ক্রেতাদের ভালোই সাড়া পাচ্ছি। দুপুরের পর থেকে ভিড় শুরু হচ্ছে আর রাত পর্যন্ত। আমাদের মার্কেটে নারীদের ৩৭০ থেকে শুরু করে ১২৫০ টাকা পর্যন্ত আছে। তবে এ বছর নারী- শিশুদের জুতার চাহিদা বেশি। আমাদের দোকানে সব বয়সী নারী পুরুষের জুতা, স্যান্ডেল, সু ইত্যাদি পাওয়া যায়।